ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি বাড়ায় সুনামগঞ্জে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এতে জেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন। জেলায় ৫৪১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে ১৮ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন বলে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে। তবে এই সংখ্যা আরও বেশি বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। সময় যত যাচ্ছে, আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।

নতুন করে প্লাবিত হয়েছে দোয়ারাবাজার, ছাতক, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, শাল্লা, ধর্মপাশা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম।

সুরমা নদীর পানি কমলেও বৃদ্ধি পেয়েছে হাওরের পানি। ফলে হাওর পাড়ের গ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত কম হলেও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানি বাড়ছে। ভারতের চেরাপুঞ্জিতে অতিবৃষ্টির কারণে সুনামগঞ্জে পানিবন্দী কয়েক লাখ মানুষ। জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ সহ বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে খুলে দেওয়া হয়েছে বন্যার্ত মানুষদের জন্য। সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শহরতলীর বেশ কয়েকটি এলাকা।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি আজ সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। ছাতক উপজেলা সদরে সুরমা নদীর পানি ১৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বুধবার সকাল ৯টা) বৃষ্টি হয়েছে ১০০ মিলিমিটার। তবে এখানে বৃষ্টি কম হলেও সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। যে কারণে উজান থেকে ব্যাপক পরিমাণে পাহাড়ি ঢল নামছে সুনামগঞ্জে।

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলার মধ্যে ১০টি উপজেলার ৪টি পৌরসভা ও ৭৪টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত। ১ হাজার ১৮টি গ্রামের প্রায় ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে সদর, ছাতক, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় পানি বেশি উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে জেলার শান্তিগঞ্জ, জগন্নাথপুর, জামালগঞ্জ, দিরাই ও শাল্লা উপজেলায় পানি বেড়ে বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এসব উপজেলায় রাস্তাঘাট, বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। জেলার মোট ৫৪১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবন, ব্যক্তিমালিকানা ভবনে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ইতিমধ্যে ১৮ হাজার ৪২৯ জন বন্যার্ত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন ছাতক উপজেলায়। এই উপজেলা এক সপ্তাহ ধরে বন্যাকবলিত। এখানে ৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৭ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনা ও রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে।