সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে না পারার দুঃখের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে বিমানে চললে তিনি বাংলাদেশের সিনেমা দেখেন বলে জানান। আন্তর্জাতিকমানের বাংলা সিনেমা নির্মাণে তিনি সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দিয়েছেন।মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২২ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

নিজে সিনেমা পছন্দ করেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, হলে যেহেতু সিনেমা দেখা হয় না, যখন বিমানে চড়ি, তখন কিন্তু বাংলাদেশের সিনেমা দেখি। কিছু দিন আগে সাউথ আফ্রিকায় যাওয়ার সময় পরপর দুইটা সিনেমা দেখলাম। মাঝে মাঝে অনেকে আমাকে পেনড্রাইভে ছবি পাঠায়, সেগুলোও দেখার চেষ্টা করি। কিন্তু সরকার চালানোর পাশাপাশি তো এত সময় পাওয়া যায় না।

তবে একটানা বসে দেখার তো সময় হয় না, একটা রাষ্ট্র চালানো ১৭ কোটি মানুষের বোঝা তো আমার কাঁধে। তাদের জন্য কাজ করে, আমি ফাইল দেখতে দেখতে আর ওই রিপোর্ট পড়তে পড়তে সময় চলে যায়। এত পড়তে হয়, এত পড়া যে পড়তে হবে এই বৃদ্ধ বয়সে এসে, এটা আমি কখনো ভাবিনি। মাঝে মাঝে দুঃখ হয় সত্যি এত যদি ছোটবেলায় পড়তাম তাহলে প্রতিবারে ক্লাসে ফার্স্ট হতে পারতাম। কিন্তু আল্লাহ বোধ হয় ছোটবেলায় পড়তে দেয়নি বলেছে, বুড়ো বয়সে তুই পড়বি, এখন সেটাই করতে হচ্ছে!

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যা হোক তবুও একটু একটু সিনেমা দেখি আর বিশেষ করে এভাবে রেহানা (শেখ রেহানা) আমাকে সব সময় সাহায্য করে। ও বসে বসে হুকুম দেয়, ওই সিনেমাটা দেখো তো, ওটা তোমার দেখা উচিত। আমি না দেখলে ও যখন ঢাকায় থাকে সোজা ও সেটা আমাকে দেখায়। আমি মাঝে মাঝে দেখে ভুলেও যাই, কারণ আমার বাংলাদেশের নদীনালা, খালবিলই মনে থাকে, বাকি খুব একটা মনে থাকে না। ওর কাছে তখন জিজ্ঞাসা করি আমি যেন কোন সিনেমাটা দেখেছি বলতো একটু। ও সাহায্য করে, আমি সব সময় ওর পরামর্শটা নেই। আমার ছোট বোনটা সাথে আছে, ও কিন্তু ভালো গান করতে পারে কিন্তু গায় না।

বাংলা সিনেমার উন্নয়নে তার সরকার ও দলের ভূমিকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর বাংলাদেশে অপসংস্কৃতির যাত্রা শুরু হয়েছিল। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে চলচ্চিত্র শিল্পকে উন্নত করার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাঙালি, আমাদের ভেতর যে সৃষ্টিশীলতা রয়েছে, তা যেন সবাই ভুলেই গিয়েছিল তখন। একটি দেশের সমাজকে সচেতন করতে পারে চলচ্চিত্র। সিনেমা যেমন আনন্দ দেয়, তেমনি ইতিহাসও ধারণ করে রাখে।

চলচ্চিত্রের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘টাকার অঙ্ক দিয়ে হিসাব করি না, আমাদের শিল্পীরা যাতে ভালো করে কাজ করতে পারে, সেটাই চাই। আমরা গাজীপুরে ফিল্ম সিটি প্রতিষ্ঠা করেছি। এটাও বঙ্গবন্ধু চিন্তা করেছিলেন। এটার প্রথম পর্বের কাজ শেষ হয়ে গেছে। দ্বিতীয় পর্বের কাজও হচ্ছে। সেখানে সব ধরনের শুটিং যাতে করা যায়, সেই ব্যবস্থা থাকবে। আমরা চাই দেশের অঙ্গন ছাড়িয়ে আমাদের চলচ্চিত্র বিদেশেও সমাদৃত হোক। সেই সঙ্গে শিল্পী-কুশলী সবাইকে আমি এই আহ্বান জানাই, এদিকে আরও মনোযোগ দিন। যেহেতু মানুষের জীবনে সচ্ছলতা এসেছে, তাই তারা বিনোদনের দিকে ঝুঁকছে।’

অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের বর্তমান সফলতা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদান রাখায় ২৭ ক্যাটাগরিতে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন সিনিয়র সচিব মো. হুমায়ুন কবির খন্দকার। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু।