সৌদি আরবের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জিজান প্রদেশের কিং আব্দুল্লাহ বিন আব্দুলআজিজ বিমানবন্দরে ড্রোন হামলায় কমপক্ষে ১৬ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিক রয়েছেন বলে স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে। তবে তাদের মধ্যে কোনও বাংলাদেশি আছেন কি-না তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি।

ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইরত সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সোমবার কিং আব্দুল্লাহ বিন আব্দুলআজিজ বিমানবন্দরে ছুটে আসা একটি ড্রোন আটকে দিয়েছে সৌদি আরবের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এ সময় ড্রোনের ধ্বংসাবশেষের আঘাতে বিভিন্ন দেশের ১৬ নাগরিক আহত হয়েছেন।

সৌদির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদসংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) বলছে, ড্রোনের ধ্বংসাবশেষের আঘাতে আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

ইয়েমেনের রাজধানী সানার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা পুনরায় আন্তঃসীমান্ত হামলা শুরু করেছে বলে জানিয়েছে সৌদি জোট। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইয়েমেনে বড় ধরনের সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে এ ধরনের হামলা চালানোর জন্য হুথিদের অবশ্যই পরিণতি ভোগ করতে হবে।

সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম আল-এখবারিয়ায় প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বিমানবন্দরের একটি ভবনের ভেতরে গ্লাসের টুকরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। এ নিয়ে গত দুই সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো সৌদি আরবের বিমানবন্দরে দু’বার ড্রোন হামলা চালাল হুথি বিদ্রোহীরা।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় আভা শহরের একটি বিমানবন্দরে হুথিদের ড্রোন হামলায় বাংলাদেশি প্রবাসীসহ অন্তত ১২ জন আহত হন। পরে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত রাজধানী সানায় বোমা হামলা চালিয়ে একটি টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম গুঁড়িয়ে দেয় সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট।

গত ডিসেম্বরে সৌদি জোট জানায়, হুথি বিদ্রোহীরা গত সাত বছরে সৌদি আরব লক্ষ্য করে ৮৫০টিরও বেশি ড্রোন এবং ৪০০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এতে অন্তত ৫৯ বেসামরিক নিহত হয়েছেন।

২০১৫ সালের শুরুর দিকে হুথি বিদ্রোহীদের হামলার মুখে সৌদি-সমর্থিত ইয়েমেনের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মনসুর আল হাদি ক্ষমতা ছেড়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যান। ক্ষমতাচ্যুত এই প্রেসিডেন্টকে ফেরাতে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ইয়েমেনে হুথিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।

কিন্তু এই অভিযানের শুরুর পর ইয়েমেনের রাজনৈতিক সংকটের অবসান হওয়ার পরিবর্তে তা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। বর্তমানে ইয়েমেনে কার্যত দুই শাসকগোষ্ঠী সক্রিয় আছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক সহযোগিতার ওপর ভর করে দেশটির দক্ষিণাঞ্চল এখনও মনসুর হাদির নেতৃত্বাধীন সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে, অন্যদিকে উত্তরাঞ্চল সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে হুথি বিদ্রোহীরা।

ইয়েমেনের এই সংঘাতকে মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্যের লড়াইয়ে সৌদি-ইরানের ছায়াযুদ্ধ হিসেবে দেখা হয়। টানা গৃহযুদ্ধ ও সংঘাত চলার ফলে প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এবং এক সময়ের স্বচ্ছল এই দেশ। জাতিসংঘ বলছে, ইয়েমেনের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ খাদ্য ও ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের গুরুতর সংকটে ভুগছেন।