ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বহিরাগত যানচলাচল নিযন্ত্রণ, শব্দ দূষণ প্রতিরোধসহ ১১ দফা দাবিতে মানববন্ধন ও  বিক্ষোভ করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

আজ রোববার সকালে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, ক্যাম্পাসে শিক্ষার কোনো পরিবেশ নেই। পুরো ক্যাম্পাস বহিরাগতদের নিয়ন্ত্রণে। যে যেভাবে পারছে গাড়ি চাপা দিয়ে মানুষ মারছে। এটা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ হতে পারে না। পরে শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ের লক্ষ্য একটি স্মারকলিপি নিয়ে ভিসির বাসভবনের দিকে রওয়ানা হন। সেখানেও দাবি আদায়ে বিক্ষোভ করেন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ক্যাম্পাসে প্রতিনিয়ত ৩৭ হাজার নিয়মিত শিক্ষার্থী চলাফেরা করেন। গত শুক্রবার এক নারীকে ক্যাম্পাসে টেনেহিঁচড়ে মৃত্যুর ঘটনা, ক্যাম্পাস যে অনিরাপদ এটি জানান দেয়। তাই তারা ১১ দফা দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছেন। দাবিগুলো নিয়ে তারা উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেবেন।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বহিরাগতদের চলাচল নিয়ন্ত্রণেরও দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা হুমকি দেন তারা। এ ছাড়া রুবিনা আক্তার নিহতের ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে এর বিচার নিশ্চিত করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন শিক্ষার্থীরা।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, একটা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এত উচ্চগতিতে গাড়ি চলছে, সেই গাড়ির বাম্পারে একজন নারী আটকে ছিলেন এবং পরে তার মৃত্যু হলো, আমরা এটা মেনে নিতে পারছি না। ক্যাম্পাসের ভেতরে এ ধরনের ঘটনা দুঃখজনক। বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের কারণে আমরা শিক্ষার্থীরা অতিষ্ঠ। শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে ক্যাম্পাসটা পার্কের মতো হয়ে যায়, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমন হতে পারে না। ক্যাম্পাসে যানবাহন চলাচলের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।

শিক্ষার্থীদের ১১ দফা দাবি হলো-

১। বিশ্ববিদ্যালয়ে সব যানবাহনের গতিসীমা নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ, শব্দদূষণ  প্রতিরোধে ব্যবস্থা ও শাস্তির বিধান নিশ্চিত করা।

২। রুবিনা আক্তার হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে প্রশাসনের সর্বোচ্চ সমর্থন ও সহযোগিতা আদায় করা।
৩। ক্যাম্পাসে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রধান প্রবেশদ্বারগুলোতে দ্রুত চেকপোস্ট বসানো ও গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা।
৪। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শুধু নিবন্ধিত রিকশা চলাচল এবং রিকশাচালকদের জন্য ইউনিফর্ম ও ভাড়ার চার্ট প্রস্তুত করা।
৫। ভ্রাম্যমাণ দোকানের জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ ও প্রশাসন কর্তৃক যথাযথ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করা।
৬। প্রথম বর্ষ থেকে সব শিক্ষার্থীর আইডি কার্ড প্রদান করা এবং ক্যাম্পাসের কিছু স্থানে সংরক্ষিত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা।
৭। মাদকাসক্ত ও ভবঘুরে ব্যক্তিদের ক্যাম্পাস থেকে স্থায়ী উচ্ছেদ করা।
৮। সম্পূর্ণ ক্যাম্পাসকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা এবং ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা।
৯। প্রক্টর অফিসে জমে থাকা সব অভিযোগ নিষ্পত্তি করা।
১০। নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রক্টোরিয়াল অফিসের জবাবদিহি নিশ্চিত করা।
১১। নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিগুলো বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থীরা এ আন্দোলনে রয়েছেন।

প্রসঙ্গত: গত শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিচ্যুত শিক্ষক আজহার জাফর শাহর ব্যক্তিগত গাড়ির নিচে পড়ে আটকে যান রুবিনা আক্তার নামে এক নারী। পথচারীদের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও আজহার জাফর শাহ ওই অবস্থাতেই গাড়িটি নিয়ে ছুটতে থাকেন। প্রচণ্ড চাপ ও আঘাতে পিষ্ট হয়ে ওই নারীর মৃত্যু হয়। আজহার জাফর শাহকে গাড়িসহ আটকে উত্তেজিত জনতা মারধর করে, গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় গতকাল গভীর রাতে নিহত রুবিনা আক্তারের পরিবারের পক্ষ থেকে তার ভাই জাকির হোসেন বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে আজহার জাফর শাহকে।