ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে ৪-২ ব্যবধানে হারিয়ে ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ জিতলো আর্জেন্টিনা। নির্ধারিত সময়ের খেলা ২-২ গোলে সমতা থাকার পর অতিরিক্ত সময়ে মেসির গোলে ১০৯ মিনিটের মাথায় এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপ ফাইনাল তো বটেই, ফুটবল ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ম্যাচ এটা কি না তা নিয়ে জোর তর্কই হতে পারে। ছয় গোল, হ্যাটট্রিক, টাইব্রেকার সবই যে হয়েছে এই ম্যাচে। নির্ধারিত সময়ে ২-২ গোলে সমতা, অতিরিক্ত সময়ে ৩-৩। এরপর টাইব্রেকার রোমাঞ্চ ছাড়িয়ে ৪-২ গোলে জয় আর্জেন্টিনার, তাতেই তৃতীয় বারের মতো বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন আকাশি-সাদারা।

লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে ফাইনালে আক্রমণাত্মক শুরু করে আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটে ম্যাক এলিস্টারের দূরপাল্লার শট সোজা তালুবন্দি করেন ফ্রেঞ্চ গোলরক্ষক লরিস। এর ঠিক ২ মিনিট পর আবারো আক্রমণ করে আর্জেন্টিনা।

এবার ডি পল ডি বক্সের বাইরে থেকে জোড়ালো শট নিলে ফ্রেঞ্চ ডিফেন্ডার ভারানের পায়ে লেগে বল বাইরে চলে গেলে কর্নার পায় আর্জেন্টিনা। ১৬ মিনিটে আবারো গোলের সুযোগ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। এবার ডি পলের ডান পাশ থেকে বাড়ানো ক্রসে ডি মারিয়ার ডান পায়ের শট চলে যায় গোলবারের অনেক উপর দিয়ে।

ম্যাচের ২১ মিনিটে ডান দিক থেকে একজনকে কাটিয়ে ডি-বক্সে ডুকে পড়েন ডি মারিয়া। তাকে ট্যাকল করতে গিয়ে ফেলে দেন ডেম্বেলে। সাথে সাথে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। ঠাণ্ডা মাথায় স্পট কিক থেকে গোল করে দলকে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে নেন মেসি। বিশ্বকাপে এটি তার ৬ষ্ঠ গোল।

পিছিয়ে পড়ে পাল্টা আক্রমণে উাার চেষ্টা কওে ফ্রান্স। তবে আর্জেন্টিনার জমাট রক্ষণের সাথে কুলিয়ে উঠতে পারছিল না এমবাপ্পে-ডেম্বেলেরা। উল্টো ৩৭ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাকে গোল খেয়ে বসে ফ্রান্স। মাঝমাঠ থেকে মেসির পাস থেকে আলভারেজ বল পেলে সেটি বাড়ান ম্যাকএলিস্টারের উদ্দেশ্যে, দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে তিনি বল দেন ডি মারিয়াকে। আলতো চিপে বল জালে পাঠিয়ে দেন আর্জেন্টিনার মাঝমাঠের মধ্যমণি।

দুই গোলে পিছিয়ে থেকে প্রথমার্ধেই জিরু ও ডেম্বেলেকে পাল্টে ফেলেন ফ্রান্স কোচ। তবুও তাদের ভাগ্যের চাকা ফিরেনি। শেষ পর্যন্ত ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা।

দ্বিতিয়ার্ধে মাঠে নেমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে ফ্রান্স। তবে জোড়ালো কোনো আক্রমণই করতে পারছিল না। ৫৭তম মিনিটে বল নিয়ে আবার ডি বক্সে ঢুকে পড়েন ডি মারিয়া। আলতো করে বল পাঠান মেসির উদ্দেশ্যে। তবে মেসির নেওয়া শট চলে যায় ডি বক্সের বাইরে দিয়ে। মিনিট পাঁচেক পর ফের আক্রমণ করে আর্জেন্টিনা।

এবার হুলিয়ান আলভারেজের শট প্রতিহত হয় ফরাসি রক্ষণে। এরপর ৬৭তম মিনিটে কর্নার পায় ফ্রান্স। তবে মুয়ানির হেড চলে যায় গোলবারের রাইওে দিয়ে। মিনিট তিনেক পর আবার আক্রমণে উঠে ফ্রান্স। ডান দিক থেকে তিন খেলোয়াড়কে বোকা বানিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে শট নেন এমবাপ্পে। তবে তা চলে যায় পোস্টেও উপর দিয়ে।

পরের মিনিটে পাল্টা আক্রমণে যায় আর্জেন্টিনা। ম্যাকঅ্যালিস্টারের ডিফেন্স চেরা পাস সুবিধাজনক জায়গায় পেয়েছিলেন এনজো ফার্নান্দেজ। তবে তার শট লুফে নিতে কোনো সমস্যাই হয়নি হুগো লরিসের।

এরপর ৭৮তম মিনিটে বল নিয়ে আর্জেন্টিনার ডি বক্সে ঢুকে পড়েন মুয়ানি। তাকে ঠেকাতে গিয়ে ফেলে দেন নিকোলাস ওতোমেন্দি। সাথে সাথেই পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। স্পট কিক থেকে গোল করে ব্যবধান কমিয়ে আনেন কিলিয়ান এমবাপ্পে।

মিনিট দুয়েক পরেই দুর্দান্তভাবে খেলায় ফিরে আসে ফ্রান্স। কিলিয়ান এমবাপ্পের চোখধাঁধানো গোলে সমতায় ফিরে গতবারের চ্যাম্পিয়নরা। পরের ১০ মিনিটে দু’পক্ষ বেশ কয়েকটি আক্রমণ করলেও গোলের দেখা পায়নি। তাতে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

অতিরিক্ত সময়ে আক্রমণ পাল্টা আক্রমণে জমে উঠে ম্যাচ। ১০৮তম মিনিটে গোল করে দলকে এগিয়ে নেন মেসি। এটি ম্যাচে তার দ্বিতীয় গোল। তবে এগিয়ে গিয়েও লিড ধওে রাখতে পারেনি আলবিসেলেস্তরা। ১১৬ মিনিটে পেনাল্টি বক্সে হ্যান্ডবল হয় গঞ্জালো মন্তিয়েলের। ফলে স্পট কিক পায় ফ্রান্স। সেখান থেকে গোল করে আবার দলকে সমতায় ফেরান এমবাপ্পে। একইসাথে পূরণ করেন হ্যাটট্রিক। বাকি সময়ে আর কোনো গোল না হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।

সেখানে ফ্রান্সের হয়ে প্রথম শটে গোল করেন এমবাপ্পে। আর্জেন্টিনার প্রথম শটে গোল করে মেসি, কোম্যানের দ্বিতীয় শট ঠেকিয়ে দেন মার্টিনেজ। পরের শটে গোল করেন পাওলো দিবালা, তৃতীয় শটে চুয়েমিনি বল পাঠান গোলবারের বাইরে দিয়ে, আর্জেন্টিনার তৃতীয় শটে লক্ষ্যভেদ করেন পেজেলা।। চতুর্থ শটে গোল করেন কালু মুয়ানি। আর চতুর্থ শটে মন্তিয়েল লক্ষ্যভেদ করতেই উল্লাসে ফেটে পড়ে আর্জেন্টিনা দল এবং সমর্থকরা।