সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি ২৩ জনকে উদ্ধারে সরকার তৎপরতা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। আজ বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‌‘এমভি আবদুল্লাহ’ জাহাজটি এখনও জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে। তবে ২৩ জন নাবিক সুস্থ ও নিরাপদে আছেন। তাদের দ্রুত সুস্থতার সঙ্গে ফিরিয়ে আনতে পররাষ্ট্র পর্যায়ে আলোচনা চলছে। গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে ২৩ জন নাগরিকের জীবন ও নিরাপত্তার বিষয়টি। কুটনৈতিক সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে সরকার জলদস্যুদের কবলে থাকা জাহাজের উদ্ধার তৎপরতা নিয়ে কাজ করছে বলে জানান তিনি।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সোমালিয়া থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ভারত মহাসাগরে এ ঘটনা ঘটেছে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, জলদস্যুরা সোমালিয়ার। তবে তাদেরকে এখনও আইডেনটিফাই করা যায়নি।

তিনি আরও বলেন, নাবিকদের পরিবার বা স্বজনরা কি কষ্টে আছে, তা অনুভব করা যায়। যারা জাহাজ অপহরণ করেছে, তারা তো মানুষ না, দস্যু। তাই কবে তাদের উদ্ধার করা যাবে, এখনই বলা যাবে না। আন্তর্জাতিক সমুদ্র চলাচল সংস্থার (আইএমও) সদস্য হওয়ায় ভারতসহ অন্য দেশের সহযোগিতা নেয়া হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

কবির গ্রুপের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ নৌপথে পণ্য পরিবহন করে। আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে মঙ্গলবার সেটি ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়ে।

নাবিক ও ক্রু মিলিয়ে ওই জাহাজের ২৩ কর্মীর সবাই বাংলাদেশি। তাদের জিম্মি করেছে জলদস্যুরা।

নাবিকরা দেশে তাদের স্বজনদের ফোন করে বলেছেন, তাদের এখন নেওয়া হচ্ছে সোমালিয়ায়। মুক্তিপণ আদায়ে চাপ দিচ্ছে দস্যুরা। টাকা না পেলে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশি ওই জাহাজের চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান তার স্ত্রীর কাছে পাঠানো এক অডিও বার্তায় বলেছেন, “এই মেসেজটা সবাইকে পাস করে দিও। আমাদের থেকে মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে আর কি। ফাইনাল কথা হচ্ছে যে, এখানে যদি টাকা না দেয়, আমাদেরকে একজন একজন করে মেরে ফেলতে বলছে।

“এদেরকে যত তাড়াতাড়ি টাকা দিবে, তত তাড়াতাড়ি ছাড়বে বলছে। এই মেসেজটা সবাইকে পাস করে দিও। এখন মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে।”

জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ার সাইদুজ্জামান জাহাজের মালিক পক্ষের কাছে পাঠানো অডিওতে বলেন, “স্যার আমাদের মোবাইল টোবাইল সব সিজ করে নিচ্ছে। এটাই শেষ সুযোগ। আমাদের জাহাজের যে ইন্টারনেট সার্ভিস আছে, ওটা যদি ওপেন রাখেন আর কি, ওখানে যে কোনো সিচুয়েশনে মেসেজ রাখার চেষ্টা করব।

“ওটা খুলে দিয়ে রাখতে বলেন, তাহলে আমরা সুযোগ মত যোগাযোগ করব।”

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “মুক্তিপণের বিষয়টা আমাদের জানা নেই।”

এর আগে ২০১০ সালের ডিসেম্বরে আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল বাংলাদেশি জাহাজ ‘জাহান মণি’। নিকেল ভরতি ওই জাহাজের ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়।

নানাভাবে চেষ্টার পর ১০০ দিনের মাথায় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পান তারা। পরে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।