মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকে করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ‘পূর্ণ সমর্থন’ জানিয়েছেন জো বাইডেন।

মঙ্গলবার ( ২৪ সেপ্টেম্বর) রাতে জাতিসংঘের সদর দপ্তরের নির্ধারিত সভাকক্ষে বৈঠকটি হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আজ মঙ্গলবার নিউইয়র্কে দুই নেতার মধ্যে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বাইডেন এই সমর্থনের কথা জানান। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনের ফাঁকে সংস্থাটির সদর দপ্তরে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর ড. ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ৮ আগস্ট তাঁর নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ গ্রহণ করে।

শেখ হাসিনার দুঃশাসনের মুখে কী করে ছাত্র–জনতা অভ্যুত্থান করেছে এবং বাংলাদেশকে পুনরায় গড়ে তুলতে নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়েছে, ইউনূস তা বাইডেনকে অবহিত করেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ড. ইউনূস বলেন, তাঁর সরকারকে দেশ পুনর্গঠনে অবশ্যই সফল হতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা দরকার হবে।

বাইডেন বলেন, যদি শিক্ষার্থীরা নিজের দেশের জন্য এত কিছু ত্যাগ করতে পারে, তাহলে মার্কিন সরকার ও জনগণেরও বাংলাদেশের জন্য কিছু করা উচিত। যুক্তরাষ্ট্র তা করবে।

ইউনূস ছাত্র–জনতা অভ্যুত্থানের সময় আঁকা দেওয়ালচিত্রগুলোর ছবিসংবলিত একটি বই ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ বাইডেনকে উপহার দেন।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারকে ‘পূর্ণ সমর্থন’ জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আজ মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৈঠকে ড. ইউনূস বিগত সরকারের আমলে সকল ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সাহসী ভূমিকা ও বাংলাদেশ পুনর্গঠনে তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা জো বাইডেনকে জানান।

অধ্যাপক ড. ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, দেশ পুনর্গঠনে তার সরকারকে অবশ্যই সফল হতে হবে। এসময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন যেকোনো সাহায্যে বাংলাদেশ সরকারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

এর আগে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় তাকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৯তম অধিবেশনে যোগদান করায় শুভেচ্ছা জানিয়েছে জাতিসংঘ। প্রধান উপদেষ্টা এমন এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এ সফর করছেন যখন বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করছে।

সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে (সাবেক টুইটার) শেয়ার করা ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গুইন লুইস এক বার্তায় বলেন, এ বছর বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য হওয়ার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেওয়ায় আমার শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শুরু হওয়ার পর ভাষণ দেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বব্যাপী এমন এক চ্যাঞ্জেলের মুখে রয়েছি যা আগে কখনো দেখিনি। বৈশ্বিকভাবেই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। যুদ্ধ বেড়েই চলছে এবং তা শেষ হওয়ার কোনো উপায় দেখছি না।

মঙ্গলবার শুরু হওয়া জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে বিশ্ব নেতারা এমন এক সময় জড়ো হচ্ছেন, যখন ইউরোপ, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত বেড়েই চলেছে। এ ছাড়া রয়েছে গাজা যুদ্ধ এবং ইউক্রেন ও সুদানে সংঘাত। আশা করা হচ্ছে এ অধিবেশনে বিশ্বনেতারা যুদ্ধ বন্ধে তাদের কণ্ঠ জোরালো করবেন।

জানা গেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। জাতিসংঘে এটি তার চতুর্থ এবং শেষ ভাষণ। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এ ভাষণে বাইডেন বর্তমান বৈশ্বিক সংকট তুলে ধরবেন।

ইউএনজিএতে অংশগ্রহণ উপলক্ষে ড. ইউনূস এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশ সরকারের প্রধান হিসেবে এটি ড. ইউনূসের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর।