আফগানিস্তানের জঙ্গি গোষ্ঠী তালেবানের বিরুদ্ধে ব্যাপক যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠেছে। গত পাঁচদিনে আফগানিস্তানে উত্তরাঞ্চলে নয়টি প্রাদেশিক রাজধানী নিজেদের দখলে নিয়েছে তালেবান। তালেবানের দখলকৃত শহরগুলো থেকে রাজধানী কাবুলে পালিয়ে যাচ্ছেন হাজার হাজার আফগান নাগরিক।
আর এসব পলায়নপর লোকজনকে ধরে তালেবান প্রকাশ্যে শিরোচ্ছেদ করেছে। মেয়েদের জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ধর্ষণ ছাড়াও তালেবান যোদ্ধাদের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কিশোরীদের।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে দখলকৃত এলাকাগুলোতে তালেবানের নির্মমতার ভয়ঙ্কর কাহিনী শুনিয়েছেন সেখান থেকে পালিয়ে আসা আফগানরা।
বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালেবানের দখলকৃত কুন্দুজ থেকে নিজের ছয় বছর বয়সী সন্তান নিয়ে পালিয়ে এসেছেন ৩৬ বছর বয়সী আফগান নারী ফ্রিবা। তালেবানের ভয়ে নিজের আসল নাম জানাননি তিনি।
তিনি জানান, তার মতো আরও অনেকেই কুন্দুজ ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন। আসার সময় তারা কারাগারের কাছে প্রকাশ্য রাস্তায় মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেছেন। অনেক কিশোরীকে ধরে নিয়ে যেতে দেখেছেন।
কুন্দুজ থেকে পালিয়েছিলেন মীরওয়াইস খান আমিরি নামে ২২ বছর এক বয়সী যুবক। এএফপিকে তিনি জানান, পালিয়ে আসার দিন তিনি তালেবানদের হাতে আফগান গুপ্তচর সন্দেহে এক নাপিতকে খুন হতে দেখেছেন। পালানোর সময় আমিরির গাড়ি লক্ষ্য করেও গুলি চলেছিল তালেবান।
কুন্দুজ থেকে পালিয়ে আসা আব্দুল মান্নান নামে এক ব্যক্তি এএফপিকে জানিয়েছেন, তালেবান তার সামনেই তার ছেলের শিরোচ্ছেদ করেছে।
তালকান শহর থেকে পালিয়ে এসেছিলেন ২৫ বছর বয়সী বিধবা তরুণী মারওয়া জানান, তালেবান তার ১৬ বছর বয়সী বোনকে তুলে নিয়ে গিয়ে তাদের এক সদস্যের সাথে কথিত বিয়ে দিয়েছে তালেবান।
আফগানিস্তানে তালেবান যুদ্ধাপরাধ করছে বলে দাবি করে আসছে জাতিসংঘসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন। তালেবান যুদ্ধাপরাধের তদন্তও দাবি করছে তারা।
এদিকে, চলতি বছরের আফগানিস্তানের সাড়ে তিন লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে বলে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা মঙ্গলবার জানিয়েছে।
দীর্ঘ ২০ বছর পর আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আগস্টেই প্রত্যাহার প্রক্রিয়া শেষ করবে দেশটি। চলতি বছরের মে মাসে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শুরু হওয়ার পর থেকে সেখানে তীব্র লড়াই শুরু করেছে তালেবান। তালেবান যে গতিতে এগুচ্ছে তাতে রাজধানী কাবুলের যেকোনো সময় পতন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।