বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচ নিয়ে দর্শকদের উম্মাদনার শেষ নেই। কারিগরি সমস্যার কারণে দুই দিন বিরতির পর সোমবার (২৬ মে) রাত ১০টা থেকে অনলাইনে ক্লাব হাউজ-২ ও নর্থ-ওয়েস্ট গ্যালারির টিকিট বিক্রি শুরু হয়। আর রাত পোহাতেই (২৭ মে) বাফুফে জানায়, বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচের সব টিকিট সোল্ড আউট। এদিকে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচের দিন স্টেডিয়াম এলাকায় থাকবে ভ্রাম্যমান আদালত। কারো কাছে নকল টিকিট পেলে নেয়া হবে আইনানুগ ব্যবস্থা।

এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের এই ম্যাচের টিকিট বিক্রি হওয়ার কথা ছিল গত ২৪ মে দুপুর ১২টা থেকে। তবে টিকিট বিক্রি শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বাফুফে জানায়, ১২টার পরিবর্তে রাত ৮টায় শুরু হবে সিঙ্গাপুর ম্যাচের টিকিট বিক্রি।

এরপর সেদিন রাত ১১টার পর আরও একটি বিজ্ঞপ্তি দেয় বাফুফে। সেই বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানায়, সাইবার আক্রমণের কারণে টিকিট বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। দর্শকদের ভোগান্তির জন্য দুঃখপ্রকাশও করেছে তারা। এবং কি শিগগিরই টিকিট বিক্রি শুরুর নতুন সময়ের কথাও জানায় বাফুফে।

অবশেষে সোমবার রাত ১০টার পর শুরু হয় টিকিট বিক্রি। তবে এবার আর কোনো ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি দর্শকদের। নির্বিঘ্নে-ই টিকিট সংগ্রহ করতে পেরেছে দেশের ফুটবল ভক্তরা।

সত্যিকারের দর্শক-সমর্থকদের হাতে পৌঁছায়নি কাঙ্ক্ষিত সেই ম্যাচের টিকিট। যুগের পর যুগ ফুটবলকে আগলে রাখা ক্লাবগুলোতেও ফুটবলের তীব্র হাহাকার। সাবেক ফুটবলার-অধিনায়করাও পাননি সেই ম্যাচের টিকিট। অথচ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নয়া কর্তাদের ক্যারিকেচারে এই ম্যাচের টিকিট পৌঁছে গেছে মৌসুমি দর্শকদের কাছে।

আলট্রাসের সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান অভি তাদের আবেগ নিয়ে খেলা করার জন্য দুষেছেন বাফুফের কর্তাদের, ‘তারা টিকিট সোল্ড-আউটের যে গল্প বলছে সেটা বানোয়াট।’

কেবল দর্শকরা নন, ফুটবল এগিয়ে নিতে বড় ভূমিকা রাখা ফুটবল ক্লাবগুলোকেও বঞ্চিত করেছে বাফুফে। অতীতে আন্তর্জাতিক ম্যাচের টিকিট সৌজন্য হিসেবে পেত ক্লাবগুলো। ২০-৩০টা টিকিট এমনিতেই পেতেন ক্লাব কর্তারা। মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর হাতে পৌঁছায়নি কোনো টিকিট। এমনকি টিকিট কিনে নেওয়ারও সুযোগ দেওয়া হয়নি ক্লাবগুলোকে।

অনলাইনে টিকিট বিক্রি নিয়ে বাফুফে মঞ্চস্থ করেছে সিরিজ নাটক। কম্পিটিশন কমিটির প্রধান গোলাম গাউস সংবাদ সম্মেলনে অনলাইনে টিকিট নির্দিষ্ট দিনে বিক্রি শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে সার্ভার ডাউন বলে নির্ধারিত সময়ে টিকিট বিক্রি শুরু করেনি টিকিফাইলাইভ নামক প্রতিষ্ঠানটি। পরবর্তী সময়ে দুই প্রস্থ পিছিয়ে টিকিট বিক্রির সময় নির্ধারণ করে বাফুফে। তবে সে সময়ও চেষ্টা করেও টিকিট কাটা যায়নি। হাজার হাজার মানুষ টিকিট কাটতে না পেরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অথচ একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর বাফুফে ও টিকিফাই ম্যাচের সব টিকিট সোল্ড আউট ঘোষণা করে টিকিট বিক্রি বন্ধ করে দেয়।

কারিগরি ত্রুটিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে টিকিট নয়-ছয়ের অভিযোগ তুলেছেন আলট্রাসের সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান অভি।

তিনি বলেন, আমরা যারা সবসময় মাঠে গিয়ে দলকে সমর্থন দিই, তারা টিকিট পাচ্ছি না। অথচ অনেক টিকিট গেছে বনানী ক্লাবে। শুনেছি ক্রীড়া সাংবাদিকদের জন্য নির্ধারিত মিডিয়া সেন্টারের ওপরের ওভার ফ্লো বনানী ক্লাবের কাছে চড়া দরে বিক্রি করে দিয়েছেন বাফুফের এক সহ-সভাপতি।’

এদিকে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক, ফুটবলাররাও পাননি কোনো টিকিট। এ নিয়ে মঙ্গলবার জাতীয় স্টেডিয়ামে দলের অনুশীলনের সময় কথা বলেছেন সাফজয়ী বাংলাদেশ দলের গোলকিপার ও সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক। বিএনপির এই প্রভাবশালী নেতা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো টিকিট পাইনি। তবে আশা করছি বাফুফে আমাদের কিছু টিকিট দেবে। যা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খেলা দেখব।

তিনি বলেন, আমি বাফুফের সভাপতি তাবিথ আউয়ালের কাছে অনুরোধ জানাই, যাতে সাবেক ফুটবলার, অধিনায়কসহ ফুটবল সংশ্লিষ্ট সবাইকে সৌজন্য টিকিট পৌঁছে দেবেন। কারণ দেশের ফুটবলে তাদের অনেক অবদান।’